যোজিত বা গাণিতিক গড় কাকে বলে। বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা ও ব্যবহার আলোচনা কর।
ভূমিকা: যোজিত গড় হলো সমজাতীয় কতকগুলো রাশির কেন্দ্রীয় প্রবণতাকে পরিমাপক একটি সংখ্যা যা রাশিগুলোর সমষ্টিকে রাশির মোট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে যে সংখ্যা পাওয়া যায় তার সমান যোজিত গড় ও গাণিতিক গড় একটি কেন্দ্রীয় পরিমাপক।
যোজিত গড় বা গাণিতিক গড়: একই বৈশিষ্ট্যসমূহকে সম্পূর্ণ তথ্য সারির মানসমূহের যোগফলকে মোট তথ্যসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাকে যোজিত গড় বা গাণিতিক গড় বলা হয়। যোজিত গড় x = Σχ/ N। এটিকে ২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- সরল ও ভারযুক্ত যোজিত গড়।
একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন তথ্যসারির মানসমূহের যোগফলকে মোট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাই গাণিতিক বা যোজিত গড়।
যোজিত গড়ের বৈশিষ্ট্য লিখ।
যোজিত গড়ের গাণিতিক বৈশিষ্ট্য: যোজিত গড়ের কিছু গাণিতিক বৈশিষ্ট্য আছে। যথা-
১. গড়কে একটি ভারসাম্য বিন্দু হিসেবে ধরা হয়।
২. গড় হতে প্রতিটি সংখ্যা মানের বিচ্যুতি নির্ণয় করলে দেখা যায় ধনাত্মক বিচ্যুতিগুলোর যোগফল ধনাত্মক বিচ্যুতিগুলোর যোগফলের সমান হয। অর্থাৎ, সমস্ত বিচ্যুতির যোগফল শূন্য হয়।
৩. তথ্য সারিতে যতগুলো মান থাকবে তার সংখ্যাও তাদের যোজিত গড়ের গুণফলের মানগুলোর সমষ্টির সমান হবে।
৪. গড় হতে প্রতিটি সংখ্যা মানের বিচ্যুতি বর্গে যোগফল সর্বনিম্ন বিচ্যুতিগুলো যোজিত গড় হতে নেওয়া হবে।
৫. দুটি চলক x ও y যদি y= Ax + B সম্পর্কে আবদ্ধ থাকে এবং চলকের যোজিত গড় x হয়, তবে y চলকের যোজিত গড় হবে ax + b
উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় যোজিত গড় একটি আদর্শ পরিমাপক। এর নানা প্রকার গুণাবলি একে অন্যান্য মধ্যম মানের চেয়ে সুবিধাজনক হওয়ার কারণে আলাদা অস্তিত্ব দান করেছে।
যোজিত গড় বা গাণিতিক গড়ের সুবিধা আলোচনা কর।
গাণিতিক গড় একটি আদর্শ কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপক। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক উপাত্তগুলোর কেন্দ্রীয় প্রবণতার হারকে যোজিত গড়ের মাধ্যমে সহজভাবে সমাধান সম্ভব।
যোজিত গড়ের সুবিধা:
১. সংজ্ঞা: যোজিত গড়কে সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। তাই ব্যাখ্যার কোনো পার্থক্য দেখা যায় না।
২. ব্যবহার: পরিসংখ্যানের সর্বত্র এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় তা ছাড়া প্রতিদিন সাধারণ মানুষ যোজিত গড়কে ব্যবহার করে থাকে।
৩. বোধগম্যতা: যোজিত গড় অতিসহজে সকল মানুষ বুঝতে পারে।
৪. বীজগাণিতিক: যোজিত গড় বীজগাণিতিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত।
৫. তুলনামুলক: যোজিত গড় দ্বারা সকল চলকের মধ্যে কুলনা করা যায়। তাই তুলনামূলক বিষয় হিসেবে যোজিত গড় কাজ করে।।
৬. সম্মিলিত গড়: যোজিত গড় ব্যবহার করে সম্মিলিত গড় নির্ণয় করা হয় এবং ব্যবহারে উপযোগী হয়ে ওঠে।
৭. গণিতে ব্যবহার: যোজিত গড় গণিত শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়।
৮. কম প্রভাবিত: যোজিত গড় অন্যান্য গড়, যেমন- মধ্যমা ও প্রচুরকের তুলনায় নমুনা গড় দ্বারা কম প্রভাবিত হয়।
৯. ঋণাত্মক সংখ্যা: কোনো নিবেশণের যদি ঋণাত্মক মান থাকে তাহলেও যোজিত গড় নির্ণয় করা যায়।
১০. স্থিতিশীলতা: যোজিত গড় একটি স্থিতিশীলতা কেন্দ্রীয় মান
যোজিত গড় বা গাণিতিক গড় কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপে একটি আদর্শ পরিমাপক হিসেবে পরিগণিত হয় এবং এগুলি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি।
যোজিত গড় বা গাণিতিক গড়ের সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর।
যোজিত গড়ের ব্যবহার ও প্রয়েগ সর্বজনীন হলেও এর কিছু কিছু অনুপযোগিতাও রয়েছে। যোজিত গড় হলো সমজাতীয় কতকগুলো রাশির কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপক একটি সংখ্যা।
যোজিত গড়ের অসুবিধা:
১. পর্যবেক্ষণ গতি: যোজিত গড় পর্যবেক্ষনা গতির অনুপযোগী। কারণ, এটি সাধারণ পর্যবেক্ষন দ্বারা নির্ণয় করা যায় না। অন্যন্য পরিমাপ পর্যবেক্ষণযোগ্য, কিন্তু যোজিত গড়ে তা সম্ভব নয়।
২. প্রভাবিত: যোজিত গড় প্রান্তিক মান ছাড়াও যে-কোন মান দ্বারা প্রভাবিত। তবে প্রান্তিক মান দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত।
৩. লেখচিত্র: যোজিত গড় লেখচিত্রে প্রকাশ করা যায় না।
৪. অজানা তথ্য: যোজিত গড় অজানা তথ্যে ব্যবহার অসুবিধাজনক।
৫. বহির্ভূত রাশি: কোনো নিবেশনে উল্লেখ নেই এমন সংখ্যার যোজিত গড় হতে পারে। এজন্য অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।
৬. লুপ্ত সংখ্যা: কোনো নিবেশনের সংখ্যা যদি লুপ্ত যোজিত গড় নির্ণয় করা যায় না এবং ব্যবহারে অসুবিধাজনক।
৭. ভুল সিদ্ধান্ত: বিস্তারিত বিবরণ না থাকলে যোজিত গড় ত্রুটিপূর্ণ এবং সঠিক হয়ে থাকে।
৮. বঙ্কিমনিবেশন: খুব বঙ্কিমনিবেশনে যোজিত গড় ব্যকি সিদ্ধান্ত দিতে পারে না এবং সঠিক নির্দেশ চলতে পারে না।
যোজিত গড় একটি আদর্শ কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপক এর কিছু অসুবিধা থাকবে এটিই স্বাভাবিক।
যোজিত গড় বা গাণিতিক গড়ের ব্যবহার লিখ
যোজিত গড়ের ব্যবহার: যোজিত গড় একটি প্রবণ পরিমাপক হিসেবে সামাজিক অর্থনৈতিক ও ব্যবসায় সংক্রান্ত অনেক ক্ষেত্রে এর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যা নিত উল্লেখ করা হলো।
১. নিত্য দিনের জীবন ব্যবস্থা: যোজিত গড়ের উপযোগিতাসমূহ থেকে সহজেই বুঝা যায় এ কেন্দ্রীয় পরিমাপটি প্রতিদিনের জীবন ব্যবস্থায় ব্যবহার করা যায়।
২. সমাজ গবেষণা কর্ম: আধুনিককালে বিজ্ঞানের জগতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে গবেষণাকার্য পরিচালনা করতে হয়। গবেষণালব্ধ তথ্যের গড় পরিমাপ বের করা দরকারও লক্ষ করা যায়।
৩. উচ্চতর গাণিতিক কর্ম: আধুনিককালে উচ্চতর বণিতিক সকল কর্মে যোজিত গড় ব্যবহার করা হচ্ছে বিশ্লেষকের তত্ত্ব নির্মাণেও এর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে।
৪. সূচক নির্ণয় সংখ্যা: বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সূচক সংখ্যা নির্ণয়ে ভারপ্রাপ্ত যোজিত গড় ব্যবহার করা যায়।
৫. পরিসংখ্যানিক নমুনা বিন্যাসের ক্ষেত্র: পরিসংখ্যানিক গবেষণা কর্মের নমুনা পর্যবেক্ষণে যোজিত গড় ব্যবহার হয়।
৬. কালীন সারির ক্ষেত্রে: কালীন সারি বিশ্লেষণে যোজিত গড় কাজে লাগে।
৭. সম্ভাবনা বিন্যাস: পরিসংখ্যানিক কর্মের সম্ভাবনা বিন্যাস ও বিভিন্ন অভীক্ষায় যোজিত গড় ব্যবহার করা হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মূলত পরিসংখ্যানিক যথ্য বিশ্লেষণের একটি অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে যোজিত গড়। হামাড়া সার্বিক তথ্য সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য যোজিত গড় ব্যাবহার করা হয়।

No comments:
Post a Comment